Contact Form

Name

Email *

Message *

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Sunday, March 17, 2024

১৭ই মার্চ ২০২৪ খ্রীঃ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস

১৭ই মার্চ ২০২৪ খ্রীঃ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস













আজ ১৭ই মার্চ ২০২৪ ইং রোজ রবিবার, পূর্ণজ্যোতি শিশু সদনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। এসময় প্রতিষ্টানের পরিচালক ভদন্ত সুবর্ন ভিক্ষু মহোদয় বঙ্গবন্ধুর শিশু ও কৈশোর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও আরো সদস্যবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।এরপর সমাবেত প্রার্থনা সহ বিশ্ব শান্তি কামনায় পূন্য কামনা করা হয়। আনুমানিক ১২:৩০ টায় নিবাসীদের উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়।


Tuesday, March 5, 2024

অভিধর্ম পিটকে "পট্ঠান" বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা : ভদন্ত মেত্তাবংশ মহাস্থবির

অভিধর্ম পিটকে "পট্ঠান" বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা : ভদন্ত মেত্তাবংশ মহাস্থবির 


👉 'অভিধম্ম' বা অভিধর্ম অর্থে বুঝায়- উচ্চতর ধর্ম বা বাণী। 'অভি' শব্দকে এখানে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে ব্যবহার করা হয়েছে; যেমন- মহান, উৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম, স্পষ্ট। ধম্ম বা ধর্ম বহু অর্থবোধক শব্দ। এটি ধর-ধাতু নিষ্পন্ন, ধারণ করা, সমর্থন করা। এখানে ধম্ম (ধর্ম) শব্দের অর্থ বাণীরূপে গৃহীত হয়েছে। অর্থসালিনীতে (অর্থকথায়) 'অভি'কে 'অতিরেক' উচ্চতর, বৃহত্তর, অতিরিক্ত অথবা 'বিসিট্ঠ' বিশিষ্ট, স্পষ্ট, বিশেষ, সর্বোত্তম অর্থেও গ্রহণ করা হয়েছে।


অভিধর্ম অর্থ- উচ্চতর বাণী। কারণ এটি কোনো ব্যক্তিকে বিমুক্তি সোপানে পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম অথবা এটি সূত্রপিটক এবং বিনয়পিটকের জীব, সত্ত্ব, প্রাণী ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। অপরপক্ষে অভিধর্ম পিটকে তিনি প্রত্যেক বিষয়কে সূক্ষ্ণানুসূক্ষরূপে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন এবং গভীরার্থ প্রকাশক বস্তুনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এরূপ স্পষ্ট বিশ্লেষণমূলক বস্তুনিরপেক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করাতে তা অভিধর্ম নাম ধারণ করে। এরূপ গুরুত্বপূর্ণ গভীরার্থ প্রকাশক অধ্যাত্মবাণীর আধিক্য হেতু অথবা তা বিমুক্তি প্রদর্শী বলে বিষয়-বিন্যাসে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে তাকে অভিধর্ম বলা হয়।


অভিধর্ম পিটক সাত ভাগে বিভক্ত। ১. ধর্মসঙ্গণী, ২. বিভঙ্গ, ৩. ধাতুকথা, ৪. পুদ্গল-প্রজ্ঞপ্তি, ৫. কথাবত্থু, ৬. যমক ও ৭. পট্ঠান।


👉 এখানে মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে- 'পট্ঠান' বা 'পট্ঠান-পকরণ'। এটি হলো অভিধর্ম পিটকের সুবিশাল ও অত্যাবশ্যকীয় সর্বশেষ গ্রন্থ। এটিকে মহা-পকরণ (মহাপ্রকরণ) নামেও উল্লেখ করা হয়। এটি অতি মূল্যবান গ্রন্থ। মূলত 'পট্ঠান' গ্রন্থে নাম-রূপ, চিত্ত-চৈতসিক ও নির্বাণ সম্পর্কিত যাবতীয় ব্যাপারে পরস্পর সম্পর্ক ও কারণ নির্ণয় করাই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বুদ্ধের দর্শনে কার্য-কারণ নির্ণয়ের দুটি পদ্ধতির উল্লেখ আছে- প্রতীত্যসমুৎপাদ নয় এবং পট্ঠান নয় (প্রস্থান নয়)। সূত্রপিটকে প্রতীত্যসমুৎপাদ পদ্ধতিতে সমস্ত জাগতিক বস্তুর উৎপত্তি-বিলয়কে দ্বাদশ প্রকার নিদানাকারে বিন্যস্ত করে অনিত্যতা ও অনাত্মতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পট্ঠান-প্রকরণে ২৪ প্রকার প্রত্যয়কে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে কারণ ও কার্যের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সম্পর্ক প্রদর্শনপূর্বক প্রতীত্যসমুৎপাদ পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সংক্ষেপে পট্ঠানকে প্রতীত্যসমুৎপাদ বিশ্লেষণধর্মী ব্যাখ্যাগ্রন্থ বলা যায়।


মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ বুদ্ধগয়ায় সর্বজ্ঞতা-জ্ঞান লাভ করার পর চতুর্থ সপ্তাহে বোধি পালঙ্কের উত্তর-পশ্চিম দিকে রত্নঘর চৈত্যে উপবেশন করেন। এই স্থানে উপবেশন করে তিনি সপ্ত-অভিধর্ম প্রকরণ চিন্তা ও গবেষণা করেছিলেন। এজন্য রত্নগৃহের নামকরণ করা হয়েছে 'রত্নঘর চৈত্য'। সপ্ত-অভিধর্ম প্রকরণের মধ্যে ধর্মসঙ্গণী, বিভঙ্গ, ধাতুকথা, পুদ্গল-প্রজ্ঞপ্তি, কথাবন্ধু, যমক প্রভৃতি ছয় খণ্ড অভিধর্ম বিষয়ে গবেষণা করা সত্ত্বেও বুদ্ধের শরীর হতে ষড়বর্ণ রশ্মি নির্গত হয়নি। সর্বশেষ সপ্তম খণ্ড 'পট্ঠান' প্রকরণে বর্ণিত হেতু-প্রত্যয়, আলম্বন-প্রত্যয়াদি প্রভৃতি ২৪ প্রকার প্রত্যয় সম্পর্কিত গবেষণায় যখনই রত হন, তখনই ভগবান বুদ্ধের দেহ হতে অত্যুজ্জ্বল ষড়রশ্মি (নীল, পীত, লৌহিত, শ্বেত, মঞ্চিষ্টা ও প্রভাস্বর) নির্গত হতে থাকে। তাই প্রখ্যাত অর্থকথাচার্য বুদ্ধঘোষ এই সম্পর্কে শাস্ত্রে উল্লেখ করে বলেন, 'বিশাল তিমির মৎস্য যেমন ৮৪ হাজার যোজন গভীর মহাসমুদ্রে অবস্থান করে, সেরূপ সর্বজ্ঞতা-জ্ঞান সত্যিই মহাপট্ঠানেই স্থিত হয়ে অবকাশ লাভ করে।' ভগবান বুদ্ধের শরীর হতে নির্গত ষড়রশ্মি প্রথমে ঘন মহাপৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হয়। তাতে মহাপৃথিবী সুবর্ণপিণ্ডের ন্যায় প্রতীয়মান হয়। পরে পৃথিবী ভেদ করে উদকে (জলের মধ্যে) পরিব্যাপ্ত হয়। পুনরায় বাতাস হতে আকাশে ছড়িয়ে পড়লে আকাশে ছড়ানো রশ্মি চতুর্মহারাজিক দেবলোকে গিয়ে পরিব্যাপ্ত হয়। অনুরূপভাবে চতুর্মহারাজিক দেবলোক হতে তাবতিংস, তুষিত, নির্মাণরতি, পরনির্মিত ও যাম দেবলোক পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। যামলোকের রূপব্রহ্মারশ্মির প্রভা এতই বিস্তৃত ও প্রভাবশালী ছিল যে, চন্দ্র-সূর্যের কিরণ নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিল। সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের কিরণ বুদ্ধ হতে নির্গত রশ্মির নিকট জোনাকির মতো প্রতীয়মান হয়। এ-ছাড়াও বুদ্ধের চতুর্দিকে আশীহস্ত বিস্তৃত রশ্মিমণ্ডল সর্বক্ষণ শোভা পেতে থাকে। ভগবান বুদ্ধ এভাবে রত্নঘর চৈত্যে একসপ্তাহ অবস্থান করে স্বীয় পরিজ্ঞাত ধর্মের গবেষণা করে অতিবাহিত করেন। এই একসপ্তাহের গবেষিত ধর্ম অপরিসীম, অপরিমেয়, অনন্ত। এটাই হলো বুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক ও নিগূঢ় তত্ত্বপূর্ণ জটিল ধর্মদেশনা।


'পট্ঠান' অর্থ প্রধান-কারণ, প্রকৃত-কারণ। এর আলোচ্য বিষয় ২৪ প্রকার প্রত্যয়। প্রত্যয় অর্থও কারণ, হেতু, নিদান, উপকারক বা সাহার্যকারী। প্রত্যেক কারণের মুখ্য ও গৌণ দ্বিবিধ ফল। কোনো ব্যক্তি যদি অর্থ লাভের জন্য কৃষি বা বাণিজ্য করেন এবং তদ্বারা অর্থাগম হয় ও পরিবার-প্রতিপালন ও দানাদি কুশলকর্ম করেন, তবে তিনি এর সুফল ভাবীকালে ভোগ করবেন। তাঁর অর্থ- লাভ, পরিবার-প্রতিপালন, পুণ্যফল ইত্যাদি গৌণ ফল। কিন্তু এসব কার্যে তাঁর চিত্তের ও দেহের যে-অনুশীলন হয়, সেই সমুদয় মুখ্যফল। নাম-রূপ সম্পর্কিত মুখ্য-ফলের প্রত্যয়-বিচারই পট্ঠানের আলোচ্য বিষয়। এই ষড়েন্দ্রিয় গ্রাহ্য জড়াজড়ের যাবতীয় ঘটনা, যাবতীয় জড়াজড়, তাদের উপকরণ, তাদের উৎপত্তি, স্থিতি এক নির্দিষ্ট বিধানে সম্পাদিত হচ্ছে। ঐ বিধানসমূহকে 'প্রত্যয়' বলা হয়েছে। ক্ষুদ্র, বৃহৎ প্রত্যেক ঘটনা বা চিন্তার সাথে সম্বন্ধীভূত; কিছুই খেয়ালের বশে বা বিনা সম্বন্ধে কিংবা বিনা কারণে সংঘটিত হয় না। এরূপে যেই পূর্ববর্তী অবস্থার সহায়ে পরবর্তী অবস্থা উৎপন্ন হয়। সেই পূর্ববর্তীটি 'প্রত্যয়-ধর্ম' এবং পরবর্তীটি 'প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম'। এই প্রক্রিয়ার সংসাধক 'প্রত্যয়-শক্তি'। এই প্রত্যয়-শক্তি ২৪ প্রকারে প্রতীয়মান হয়। অবিদ্যা প্রত্যয়-ধর্ম এবং সংস্কার প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। অবিদ্যা হেতু-প্রত্যয়-স্বভাববিশিষ্ট হলে অকুশল সংস্কার উৎপন্ন হয়। কিন্তু অবিদ্যাকে যদি হেতু হতে না দিয়ে উপনিশ্রয়-প্রত্যয়াকারে ব্যবহার করা হয়, তবে কুশল সংস্কার উৎপন্ন হয়। দুধকে একভাবে ব্যবহার করলে তা হতে দধি জন্মে। অন্যভাবে ব্যবহার করলে মাখন উৎপন্ন হয়। অবশ্য অবিদ্যার সম্পর্কে সংস্কার প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম বটে, কিন্তু বিজ্ঞানের সম্পর্কে সংস্কার প্রত্যয়-ধর্ম এবং বিজ্ঞান সংস্কারের প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। এরূপে যা একের সম্পর্কে প্রত্যয়-ধর্ম, তা অন্য একটির সম্পর্কে প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম।


সমগ্র 'পট্ঠান' গ্রন্থে ২৪ প্রকার প্রত্যয়ের উপর ভিত্তি করে ভগবান বুদ্ধ কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে শ্রেণি-বিন্যাসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ, বিভাজন, পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বনিরূপণ করে বিশদভাবে আলোচিত ও দেশিত হয়েছে।


👉 মূল "পট্ঠান" কি? 

২৪ প্রকার প্রত্যয় কোথা থেকে পাওয়া যায়?


এই মূল পট্ঠানকে দেশনার ভিত্তিতে ৩টি ধরণে ভাগ করা হয়। 

১. অতিবিত্থারদেসন

২. অতিসঙ্খেপদেসনা

৩. নাতিবিত্থার নাতিসঙ্খেপদেসনা


এই ৩টির মধ্যে অতিবিত্থারদেসনা হলো বিস্তারিতভাবে করা দেশনা। যেটি বুদ্ধ তাবতিংস দেবলোকে দেশনা করেছিলেন।


আর অতিসঙ্খেপদেসনা হলো, বুদ্ধ তাবতিংস দেবলোকে দেশনার জন্যে নিমিত্তরূপ বুদ্ধের আবির্ভাব করে দেশনা চালিয়ে রাখতেন আর স্বয়ং ভূলোকে হস্তমুখাদি প্রক্ষালন ও আহারের জন্যে অবতরণ করতেন। উত্তরদীপে পিন্ডচারণ করে ভোজন করেন এবং তৎপশ্চাৎ হিমালয়ের চন্দনবনে বিশ্রাম নিতেন। ঐ সময়ে ধর্মসেনাপতি সারিপুত্র স্থবির মহোদয় সেখানে বুদ্ধের সেবার জন্যে প্রস্তুত হলে বুদ্ধ তাকে তাবতিংস স্বর্গে দেয়া অভিধর্ম দেশনাটাকে অতিসংক্ষেপে দেশনা করতেন। বুদ্ধের এই দেশনাটাকে অতিসংক্ষেপ অর্থাৎ অতিসংক্ষিপ্ত অভিধর্ম দেশনা বলা হয়। 


বুদ্ধ অতিসংক্ষেপে দেয়া অভিধর্ম দেশনাটাকে মহামান্য সারিপুত্র স্থবির মহোদয় নিজ জ্ঞানে বিস্তারিতভাবে জেনে যেত। আর সেটিকে তার পাঁচশত শিষ্যকে দেশনা করতো। যেই শিষ্যরা একসময় অভিধর্ম শ্রবণ করা পাঁচশত বাঁদুর ছিল। আর মহামান্য সারিপুত্র স্থবির মহোদয়ের দেয়া অভিধর্মের এই দেশনাটাকেই নাতিবিত্থার নাতিসংক্ষেপ অর্থাৎ খুব বিস্তারিতও নয় আবার খুব সংক্ষিপ্তও নয়। 


👉 এই "পট্ঠান" কেমন?


ঐ বিশাল পট্ঠানে ছোট ছোট ২৪টি পট্ঠান অন্তর্ভুক্ত। মানে আপনারা যেই  ২৪ প্রত্যয় সম্পর্কে জানেন সেই ২৪টা ছোট ছোট পট্ঠান মিলেই এই বিশাল পট্ঠান। 


বিশেষ দ্রষ্টব্য : অনেকে ২৪টি প্রত্যয় ভেবে ভুল করবেন। এখানে প্রত্যয়ের কথা বলা হয়নি। 


প্রকৃতপক্ষে এই ২৪টি পট্ঠানের একেকটি পট্ঠান এতোই বিশাল যে, যা এখানে বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু ঐ ২৪টি পট্ঠানকে দেশনানুসারে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

১. ধর্মানুলোম পট্ঠান,

২. ধর্মপ্রত্যনীয় পট্ঠান,

৩. ধর্মানুলোম প্রত্যনীয় পট্ঠান,

৪. ধর্মপ্রত্যনীয়ানুলোম পট্ঠান। 


এই ৪টি পট্ঠানের প্রত্যেকটিতে ৬টি করে পট্ঠান অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত।

১. তিক পট্ঠান,

২. দুক পট্ঠান,

৩. দুকতিক পট্ঠান,

৪. তিকদুক পট্ঠান,

৫. তিকতিক পট্ঠান,

৬. দুকদুক পট্ঠান। 


সর্বমোট ২৪টি (উপরের ৪টি × নিচের ৬টি) 


যদি উপরের ৪টি-এর মধ্যে প্রথমটিতে যদি নিচের ৬টিকে যোগ করা হয় তাহলে এমনটা দাঁড়ায়।


১. ধর্মানুলোম তিক পট্ঠান,

২. ধর্মানুলোম দুক পট্ঠান,

৩. ধর্মানুলোম দুকতিক পট্ঠান,

৪. ধর্মানুলোম তিকদুক পট্ঠান,

৫. ধর্মানুলোম তিকতিক পট্ঠান,

৬. ধর্মানুলোম দুকদুক পট্ঠান।


অনুরূপভাবে বাকি ৩টির সাথে ৬টি ৬টি যোগ করলেই আরো ১৮টি পাওয়া যাবে। 

আর এভাবেই ২৪টি পট্ঠান হয়ে থাকে। 

যেগুলোকে দেশনার ভিত্তিতে হেতু-প্রত্যয়, আলম্বন-প্রত্যয় বলে জানা যায়।


বিশেষ দ্রষ্টব্য :  এই ২৪ প্রকার প্রত্যয়কে পট্ঠান গ্রন্থ বলা হয় না। পট্ঠান বলা হয় উপরের বর্ণিত ধর্মানুলোম দুকা তিকা গুলোকেই পট্ঠান গ্রন্থ বা পট্ঠান বলা হয়।


👉 পট্ঠানে বর্ণিত ২৪ প্রকার প্রত্যয়ের সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো : সংখ্যা শাস্ত্রে অসংখ্য সংখ্যা যেমন দশটি সংখ্যার অন্তর্গত, তেমনি পট্ঠানে জড়াজড়ের যাবতীয় ঘটনাকে ২৪ প্রকার প্রত্যয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। যথা : ১. হেতু-প্রত্যয়, ২. আলম্বন-প্রত্যয়, ৩. অধিপতি-প্রত্যয়, ৪. অনন্তর-প্রত্যয়, ৫. সমনন্তর-প্রত্যয়, ৬. সহজাত-প্রত্যয়, ৭. অন্যান্য-প্রত্যয়, ৮. নিশ্রয়-প্রত্যয়, ৯. উপনিশ্রয়-প্রত্যয়, ১০. পূর্বজাত-প্রত্যয়, ১১. পশ্চাজাত-প্রত্যয়, ১২. আসেবন-প্রত্যয়, ১৩. কর্ম-প্রত্যয়, ১৪. বিপাক-প্রত্যয়, ১৫. আহার-প্রতায়, ১৬. ইন্দ্রিয়-প্রত্যয়, ১৭. ধ্যান-প্রত্যয়, ১৮. মার্গ-প্রত্যয়, ১৯. সম্প্রযুক্ত-প্রত্যয়, ২০. বিপ্রযুক্ত-প্রত্যয়, ২১. অস্তি-প্রত্যয়, ২২. নাস্তি-প্রত্যয়, ২৩. বিগত-প্রত্যয়, ২৪. অবিগত-প্রত্যয়।


👉 #প্রত্যয়সমূহের_সারসংক্ষেপ_ব্যাখ্যা :


👉 ১. হেতু-প্রত্যয় : এখন এখানে প্রশ্ন হচ্ছে হেতু কি আর প্রত্যয়-ই বা কি? (গাছের মূল শিকরের সাথে তুলনীয়) মূল তথা শিকড় অর্থে হেতু আর উপকারক অর্থে প্রত্যয়। হেতুপ্রত্যয়সমূহ ছয় প্রকার। যথা: লোভ, দ্বেষ, মোহ, অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ। এগুলো চৈতসিকও বটে। লোভ, দ্বেষ, মোহ অকুশলের মূল আর অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ কুশলের মূল। শিকড় যেমন বৃক্ষকে ভূমিতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখে ঠিক তদ্রূপ এরাও চিত্তকে আলম্বনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখে বলে হেতু আর এরূপ হেতুর আকারে এরা প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মোৎপত্তি ও স্থিতির উপকার করতে পারে বলে লোভাদি প্রত্যয়ধর্মী। তাই তথাগত বুদ্ধ ধর্মপদের তৃষ্ণাবর্গে ব্যক্ত করেছেন-

'যথাপি মূলে অনুপদ্দবে দহে, ছিন্নোপি রুকখো পুনরেব রূহতি; এবম্পি তণহানুসযে অনূহতে, নিব্বত্ততি দুদ্ধমিদং পুনগুনং।' 

'মূল (শিকড়) উৎপাটিত না হলে ও দৃঢ় (উপাদান) থাকলে বৃক্ষ যেমন বৃদ্ধি পায়; সেরূপ তৃষ্ণামূল (আসক্তি) বিনষ্ট না হলে দুঃখও পুনঃপুন উৎপন্ন হয়।' অর্থাৎ হেতুধর্মকে ভিত্তি করে হেতুপ্রত্যয় দ্বারা হেতুধর্ম উৎপন্ন হয়। এরূপ ৬ হেতুপ্রত্যয়ধর্মী এবং প্রত্যয়োৎপন্ন ৭১ প্রকার সহেতুক চিত্ত, ৫২ প্রকার চৈতসিক, সহেতুক চিত্তজরূপ এবং প্রতিসন্ধিকালীন কর্মজরূপ। হেতু সবসময় চৈতসিক কিন্তু এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম সবসময় চিত্ত এবং রূপ উভয়।


👉 ২. আলম্বন-প্রত্যয় : 'আলম্বন' কি? কোন অর্থে-ই বা আলম্বন? 'আলম্বিতব্য'- এ অর্থে 'আলম্বন'। বস্তু বা বিষয় অন্তর বা বাহিরে আলম্বনরূপে ধারণ বা গ্রহণ করে- এই অর্থে আলম্বন। চুম্বক যেমন চুম্বকীয় শক্তি দ্বারা লৌহ আকর্ষণ করে, জীবও তেমনি তৃষ্ণা ও আসক্তিবশে রূপ-রসাদি গ্রহণ করে- এই অর্থে আলম্বন। আলম্বন প্রধানত ছয় প্রকার। যথা : রূপালম্বন, শব্দালম্বন, গন্ধালম্বন, রসালম্বন, স্পষ্টব্যালম্বন ও ধর্মালম্বন। এ ছয় আলম্বনই আলম্বন-প্রত্যয় ধর্ম এবং সমগ্র চিত্ত-চৈতসিকই আলম্বন প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। আলম্বন যখন অত্যন্ত প্রীতির, লোভের বা গভীর শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করে, তখন উহা আলম্বনাধিপতি বা আলম্বনোপনিশ্রয়-প্রত্যয়ধর্মী হয়। এই প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম আট প্রকার লোভসহগত চিত্ত, আট মহাকুশল চিত্ত, চার জ্ঞান-সম্প্রযুক্ত মহাক্রিয়া, আট লোকোত্তর চিত্ত, সাতচল্লিশ চৈতসিক, আলম্বন প্রত্যয়-রূপ- নাম-প্রজ্ঞপ্তি ও নির্বাণ; কিন্তু এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম সর্বদা চৈতসিক।


👉 ৩. অধিপতি প্রত্যয় : কোন অর্থে 'অধিপতি'? আধিপত্য বিস্তার করে- এই অর্থে অধিপতি। অধিপতি-প্রত্যয় দুই প্রকার। যথা : আলম্বনাধিপতি ও সহজাতাধিপতি। অবিদ্যাচ্ছন্ন চিত্তে চিন্তা করার সময় যদি লোভমূলক চিত্ত উৎপন্ন হয়, তবে সেই উৎপন্ন কালে অবিদ্যা ঐ রাগের আলম্বন এবং উক্ত আলম্বনে উপজীব্য হয়ে অতিইষ্ট, অতিকান্ত, অতিমনোজ্ঞ ও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে উপভোগ করত প্রভাব বিস্তার করে, সেই সময়ই আলম্বনাধিপতি। অধিপতি স্বভাবসমূহে ছন্দ, চিত্ত, বীর্য ও মীমাংসা বা প্রজ্ঞা-এ ধর্মসমূহই 'সহজাতাধিপতি প্রত্যয়'। এদের প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম আঠার প্রকার দ্বিহেতুক জবন, চৌত্রিশ প্রকার ত্রিহেতুক জবন। এদের সম্প্রযুক্ত চৈতসিক এবং চিত্তজরূপ কিন্তু মীমাংসা বা প্রজ্ঞা আধিপত্য অকুশলচিত্ত উৎপন্ন হয় না।


👉 ৪. অনন্তর-প্রত্যয় : 'অনন্তর' বলতে কি বুঝায়? কোনো এক চিত্ত নিরুদ্ধ হয়ে গেলে তার অবিচ্ছেদে অবিকল অন্য একচিত্ত উৎপন্ন করে- এই অর্থে 'অনন্তর'। অন্তর বা ফাঁক নেই- এই অর্থে অনন্তর। এখানে পূর্ববর্তী নিরুদ্ধ চিত্তটি অনন্তর-প্রত্যয় ধর্ম এবং পরবর্তী উৎপন্ন চিত্তটি প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। ভবাঙ্গ চিত্তের সাথে আবর্তন চিত্তের অনন্তর- প্রত্যয়। আবর্তনের সাথে দ্বি-পঞ্চবিজ্ঞানের, দ্বি-পঞ্চবিজ্ঞানের সাথে সম্প্রতিচ্ছেদ, তৎপর সন্তীরণাদির ক্রমে তদালম্বনের সাথে ভবাঙ্গের অনন্তর-প্রত্যয়, পুনঃ ভবাঙ্গের সাথে তৎপরবর্তী বীথিস্থ আবর্তন চিত্তের অনন্তর-প্রত্যয়। যেমন বীথির সাথে ভবাঙ্গে এবং ভবাঙ্গের সাথে বীথির অনন্তর সম্বন্ধ, তেমনি প্রত্যেক বীথির চিত্তসমূহের মধ্যেও ক্রমান্বয়ে অনন্তর সম্বন্ধ। ঊননব্বই প্রকার চিত্ত ও বায়ান্ন প্রকার চৈতসিক নিরুদ্ধ হয়ে অন্য চিত্ত উৎপত্তির অবকাশ দেয়, তখন অনন্তর-প্রত্যয় ধর্ম আর যখন উক্ত চিত্ত-চৈতসিক অনন্তরে অর্থাৎ তৎপরবর্তীক্ষণে উৎপন্ন হয়, তখন এটা প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। আসন্ন চিত্তের সাথে চ্যুতি চিত্তের, চ্যুতি চিত্তের সাথে প্রতিসন্ধি চিত্তের, প্রতিসন্ধি চিত্তের সাথে ভবাঙ্গের এবং ভবাঙ্গের সাথে ভব-নিকন্তি নামক লোভ জবন চিত্তের অনন্তর-প্রত্যয়। এরূপে জীবের অনাদিকাল হতে অনুপাদিশেষ নির্বাণ লাভ না হওয়া অবধি চিত্ত পরম্পরা উৎপত্তি-বিলয়ের মধ্য দিয়ে পরিবর্তীত হতে হতে অবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হয়ে থাকে। চিত্তের ক্রমোন্নতি যখন অর্হতের চিত্তে পরাকাষ্ঠ লাভ করে তখন চেতনা ও কর্ম ক্লেশ সম্পূর্ণ নিরুদ্ধ হয়ে যায়, পুনরুৎপত্তির হেতু ধ্বংস হয় এবং অর্হতের চ্যুতির সঙ্গে চিত্ত-প্রবাহ রুদ্ধ হয়। অনন্তর-প্রত্যয় হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে শ্বাশত উচ্ছেদদৃষ্টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়; অনাত্ম জ্ঞানোদয় হয়; সম্যক দৃষ্টি উৎপন্ন হয়; দুঃখসত্য প্রকট হয়।


👉 ৫. সমনন্তর-প্রত্যয় : 'সমনন্তর' কি? সংলগ্নতা, নিকটবর্তী অবস্থান বা সুষ্ঠ অনন্তর-প্রত্যয় ক্ষেত্রে চিত্ত উৎপত্তি ও নিরুদ্ধ হওয়ার যেরূপ গতি সমনন্তর-প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে সেই গতি অতি দ্রুত। সমনন্তর-প্রত্যয়ের এত দ্রুত গতিতে চিত্তের চ্যুতি ও উৎপত্তি হয় যে, প্রথমটি কোথায় শেষ এবং দ্বিতীয়টি কোথায় আরম্ভ হয় তা বুঝা অত্যন্ত কঠিন। এজন্যই কেউ কেউ চিত্তকে নিত্য, শাশ্বত, আত্মারূপে কল্পনা করেছেন। এখানেই ভ্রান্ত ধারণা উৎপন্ন হয়।


👉 ৬. সহজাত-প্রত্যয় : 'সহজাত' অর্থ কি? একসাথে উৎপন্ন করে অর্থে 'সহজাত'। একসাথে উৎপন্ন করে বলতে যে ধর্ম উৎপন্ন হওয়ার সময় নিজের প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মের সাথে সাথে সহযোগি প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মসমূহকেও উৎপন্ন করায়। অর্থাৎ কোনো প্রত্যয় এর প্রত্যয়োৎপন্নের সাথে এক সঙ্গে উৎপন্ন হয়, তখন তারা সহজাত। যেমন- আলোক ও উত্তাপ সূর্যের সহজাত। যেই ক্ষণে 'বিজ্ঞান' উৎপন্ন হয়, সেই ক্ষণে বেদনা, সংজ্ঞা এবং সংস্কারও উৎপন্ন হয়- এই অর্থে চার অরূপ স্কন্ধ সহজাত-প্রত্যয়। অনুরূপ পঠবী, অপ, তেজ, বায়ু- এই চার মহাভূত পরস্পর সহজাত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। প্রতিসন্ধিক্ষণে অর্থাৎ মাতৃগর্ভে জন্ম নেওয়ার মুহূর্তে নাম-রূপ পরস্পর সহজাত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। চিত্ত-চৈতসিক ধর্মগুলো চিত্ত সমুৎপন্ন রূপগুলোর সহজাত-প্রত্যয়ের প্রত্যয়। মহাভূতগুলো তদুদ্ভুত রূপগুলোর সহজাত-প্রত্যয়ের প্রত্যয়। রূপী ধর্মগুলো অরূপী ধর্মগুলোর কখনো কখনো সহজাত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয় আবার কখনো কখনো সহজাত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয় নাও হতে পারে। প্রতিসন্ধিক্ষণে নাম-রূপ সহজাত হলেও প্রবর্তনের সময় সহজাত হয় না।


👉 ৭. অন্যোন্য-প্রত্যয় : কি অর্থে 'অন্যোন্য'? অন্যোন্য শব্দের অর্থ পরস্পর; পরস্পরের সাহায্য বা পরস্পরের আশ্রয়ে উৎপন্ন হয়- এই অর্থে অন্যোন্য। এখানে প্রথমটি প্রত্যয়-ধর্ম হলে দ্বিতীয়টি প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম; দ্বিতীয়টি প্রত্যয়-ধর্ম হলে প্রথমটি প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। এভাবে সমস্ত চিত্ত-চৈতসিক ধর্ম একে অপরে অন্যোন্য-প্রত্যয় ও অন্যোন্য-প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। ত্রিদণ্ড যেমন পরস্পরের সাহায্যে দণ্ডায়মান থাকে কিন্তু একটি পতনে অন্য দুটিও ভূপতিত হয়, তদ্রূপ অরূপ স্কন্ধ ও রূপস্কন্ধের মধ্যে চার অরূপস্কন্ধ, চার মহাভূত এবং প্রতিসন্ধি ক্ষণে নাম-রূপ পরস্পর পরস্পরের উৎপত্তি ও উপস্তম্ভনের সাহায্য করে। একটির সাথে অন্যগুলো উৎপন্ন হতে পারে না। অন্যোন্য-প্রত্যয় মাত্র সহজাত কিন্তু সহজাত মাত্রই অন্যোন্য-প্রত্যয় নয় (নহে)। চার মহাভূত রূপ ভূতোৎপন্ন রূপের সহজাত, কিন্তু অন্যোন্য-প্রত্যয় নয়, কারণ ভূতোৎপন্ন রূপ ব্যতীত চার মহাভূত রূপ বিদ্যমান থাকতে পারে। মহাভূত রূপ পরস্পর সহজাত এবং অন্যান্য উভয় প্রত্যয়।


👉 ৮. নিশ্রয়-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'নিশ্রয়'? নিশ্রয় ও আশ্রয় একার্থবোধক শব্দ। কোনো কিছুকে অবলম্বন বা আশ্রয় করে গন্তব্যে উত্তীর্ণ-এ অর্থে নিশ্রয়। আরোহী যখন নৌকার অবলম্বনে বা আশ্রয় করে নদী পার হয়, তখন নৌকা আরোহী নদী পার হবার নিশ্রয়। নিশ্রয়-প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা : সহজাত-নিশ্রয়, বাস্তু-পূর্বজাত নিশ্রয় ও বাস্তু আলম্বন পূর্বজাত নিশ্রয়। ভূমি উদ্ভিদের নিশ্রয়; চক্ষু বাস্তু চক্ষুবিজ্ঞানের নিশ্রয়; চক্ষু পূর্বজাত; তারপর চক্ষুবিজ্ঞান উৎপন্ন হয়। এজন্য চক্ষু 'পূর্বজাত-নিশ্রয়' কিন্তু চিত্ত-চৈতসিক সহজাত হয়ে পরস্পর পরস্পরের নিশ্রয় হয়, তখন সহজাত-নিশ্রয়। নিশ্রয়-প্রত্যয় এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মকে উৎপত্তি ক্ষণ হতে সাহায্য করে।


👉 ৯. উপনিশ্রয়-প্রত্যয় : 'উপনিশ্রয়' কি? বলবান নিশ্রয়-ই উপনিশ্রয়। নিশ্রয়-এর অপর নাম উপায় বা অবলম্বন। এ নিশ্রয় হতে উপনিশ্রয় বুঝানোর জন্য 'উপ' উপসর্গের সংযোগ করা হয়েছে। এই অর্থে উপনিশ্রয় অপর নাম 'প্রধান উপায়' বলবান কারণ। উপনিশ্রয়-প্রত্যয় তিনি প্রকার; যথা: আলম্বনোপনিশ্রয়, অনন্তরোপনিশ্রয় ও প্রকৃতি-উপনিশ্রয়। এ ত্রিবিধ উপনিশ্রয়-প্রত্যয়ের মধ্যে আলম্বনোপনিশ্রয়, আলম্বনাধিপতি সদৃশ এবং অনন্তরোপনিশ্রয়, অনন্তর-প্রত্যয় সদৃশ। ভবিষ্যৎ, বর্তমান নিজের ও পরের ঊননব্বই প্রকার চিত্ত, বায়ান্ন প্রকার চৈতসিক, আটাইশ প্রকার রূপ, নির্বাণ, প্রজ্ঞপ্তি- এই সমস্তই প্রকৃতি উপনিশ্রয়-প্রত্যয় ধর্ম। এরা পৃথক পৃথকভাবে অবস্থা-অনুসারে বর্তমান কালীয় সর্ববিধ চিত্ত-চৈতসিকের প্রত্যয় হয়।

কুশলাকুশলের উপনিশ্রয় কিরূপ? শ্রদ্ধাকে উপনিশ্রয় করে দান, শীল, ভাবনা করা হয়; প্রজ্ঞাকে উপনিশ্রয় করে কুশলকর্ম করা হয়। পূর্বকৃত দান, শীল, ভাবনা, পরবর্তী দান, শীল, ভাবনার উপনিশ্রয়।

কুশল অকুশলের উপনিশ্রয় কিরূপ? দান, শীল, ভাবনা অনুশীলন করে। এ দান, শীলাদির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মান কিংবা মিথ্যাদৃষ্টি উৎপন্ন হয়, তখন কুশল অকুশলের আলম্বনোপনিশ্রয় আর কুশলকর্মকে উপনিশ্রয় করে রাগ, দ্বেষ, মোহ, মান, দৃষ্টি উৎপন্ন করে তখন প্রকৃতি-উপনিশ্রয় কিন্তু কুশলে অকুশলে অনন্তরোপনিশ্রয় হয় না।

কুশল অব্যাকৃতের উপনিশ্রয় কিরূপ? কুশলকর্ম সর্বদা বিপাকের উপনিশ্রয়, বিপাক কিন্তু সর্বদা অব্যাকৃত।

অকুশল অকুশলের উপনিশ্রয় কিরূপ? লোভের উপনিশ্রয়ে প্রাণীবধ ও অন্যান্য শীল ভঙ্গ করে। রাগ (তৃষ্ণা), দ্বেষ, মোহ, মান, দৃষ্টি ও প্রার্থনা, রাগের, দ্বেষের, মোহের, মানের দৃষ্টি ও প্রার্থনার উপনিশ্রয়। এক মিথ্যা ঢাকবার জন্য (লুকানোর জন্য বা গোপন করার জন্য) শত মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

অকুশল কুশলের উপনিশ্রয় কিরূপ? অকুশলকর্মের বিপাক প্রতিহত করার জন্য দান, শীল, ভাবনাদি কুশলকর্ম করা হয়। রাগ (আসক্তি)কে উপলক্ষ্য করে কুশলকর্ম করা হয়।

অকুশল অব্যাকৃতের উপনিশ্রয় কিরূপ? রাগ, দ্বেষ এবং মোহ কায়িক সুখে- দুঃখের উপনিশ্রয়, অকুশল কর্ম বিপাকের উপনিশ্রয়। সুখ, দুঃখ ও বিপাক অব্যাকৃত অব্যাকৃত-ধর্ম অব্যাকৃত-ধর্মের উপনিশ্রয় কিরূপ? অর্হৎগণ নির্বাণকে অবলম্বন করে প্রত্যবেক্ষণ করেন। ভবাঙ্গের উপনিশ্রয়ে আবর্তন চিত্ত উৎপন্ন হয়। ঋতু, ভোজন, শয্যাসন ইত্যাদি কায়িক সুখ-দুঃখের উপনিশ্রয়।

অব্যাকৃত-ধর্ম কুশল-ধর্মের উপনিশ্রয় কিরূপ? কুশলও নয় অকুশলও নয়- এটাই অব্যাকৃত। এরূপ অব্যাকৃত স্বাভাববিশিষ্ট অর্থাৎ কুশলও নয় অকুশলও নয়-এর উপনিশ্রয়ে দান, বিহার-নির্মাণ, তীর্থভ্রমণ ইত্যাদি নানা কুশলকর্ম করা হয়। কায়িক সুখ-দুঃখ, ঋতু, ভোজন, শয্যা, আসন ইত্যাদি উপনিশ্রয়ে দান, শীল, ভাবনাদি করা হয়। পূর্ণিমা জ্যোৎস্নার উপনিশ্রয়ে অজাতশত্রু ভগবান বুদ্ধের কাছে গিয়ে শ্রামণ্য ফলের ব্যাখ্যা শ্রবণ করেছিলেন। অব্যাকৃত-ধর্ম কুশলের উপনিশ্রয় কিরূপ? চক্ষাদি দ্বাদশ-আয়তন অব্যাকৃত, এদের উপভোগ্য মনে করে যখন অভিনন্দন করা হয়, আস্বাদন করা হয়, তখন তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়। অন্ধকারের উপনিশ্রয়ে বহু পাপকর্ম করা হয়। বিহার, গৃহের উপনিশ্রয়ে মাৎসর্য উৎপন্ন হয়। কায়িক সুখ, দুঃখ, শয্যা, আসন, ভোজন প্রভৃতি উপনিশ্রয়ে প্রাণীবধাদি শীল ভঙ্গ করা হয়। এরূপ উপনিশ্রয়-প্রত্যয় অতীব বহুল।


👉 ১০. পূর্বজাত-প্রত্যয় : 'পূর্বজাত' কিরূপ? পূর্বক্ষণ হতে উৎপন্ন অবস্থায় থেকে বর্তমান ক্ষণে সাহায্যকারী রূপধর্ম-ই 'পূর্বজাত-প্রত্যয়'। পূর্বজাত-প্রত্যয় হলো পূর্বে উৎপন্ন হওয়া চিত্ত-চৈতসিক ধর্মগুলো, যা পরবর্তী ধর্মগুলোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। পূর্বজাত- প্রত্যয় সর্বদা 'রূপ' এবং প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম সর্বদা 'নাম বা চিত্ত-চৈতসিক'। চক্ষু পূর্বোৎপন্ন থেকে চক্ষুবিজ্ঞান উৎপত্তির প্রত্যয় হয়। সেরূপ শ্রোত্র, জিহ্বা, ঘ্রাণ, কায় এবং বর্ণ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পষ্টব্য পূর্বোৎপন্ন থেকে পঞ্চবিজ্ঞান ও তৎসম্প্রযুক্ত চিত্ত- চৈতসিকের পূর্বজাত-প্রত্যয় হয়। পূর্বজাত-প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা: চক্ষাদি 'বাস্তু- পূর্বজাত'। বর্ণাদি 'আলম্বন-পূর্বজাত'। এবং (হৃদয়) বাস্তুতে প্রতিসন্ধির সময় প্রতিসন্ধি-বিজ্ঞানের সহজাত, কিন্তু প্রবর্তনের সময় মনোধাতুত্রিকেরও মনোবিজ্ঞান ধাতুর 'বাস্তু-আলম্বন' পূর্বজাত-প্রত্যয়।


👉 ১১. পশ্চাজাত- প্রত্যয় : 'পশ্চাজাত' কি? পরে জন্মেছে বা শেষে উৎপন্ন হয়েছে এমন-এ অর্থে পশ্চাজাত। পশ্চাজাত চিত্ত-চৈতাসিক পূর্বজাত রূপকায়ের 'পশ্চাজাত-প্রত্যয়' বপিত বীজকে অঙ্কুরিত ও বর্ধিত হতে যেমন পূর্ববর্তী বারি-রাশি সাহায্য করে, তেমনি প্রতিসন্ধি-চিত্তের সহজাত এ কর্ম কায়াকে বর্ধন ও পোষণার্থে পরবর্তী চিত্ত-চৈতসিক শেষ চ্যুতি-চিত্ত পর্যন্ত (প্রতিসন্ধির পরে পুনঃপুন উৎপন্ন হয়ে) ক্ষণে ক্ষণে সাহায্য করে। এ পূর্বোৎপন্ন কায়ার প্রতি পশ্চাদুৎপন্ন চিত্ত-চৈতসিক এবম্বিধ সাহায্য করে 'পশ্চাজাত-প্রত্যয়' হয়। প্রতিসন্ধি-চিত্ত এবং অরূপ-বিপাক-চিত্ত ব্যতীত কাম, রূপ, অরূপ লোক ও লোকোত্তরের যাবতীয় চিত্তই এ কর্ম, চিত্ত-ঋতু-আহার সমুত্থিত রূপও কায়কে পশ্চাদুৎপন্ন হয়ে পোষণার্থ সাহায্য করে। তাই বলা হচ্ছে- 'পুরেজাতানং রূপ-ধম্মানং উপত্থম্ভকথেন উপকারকো অরূপধম্মো পচ্ছাজাত পচ্চযো' অর্থাৎ পূর্বজাত রূপ-ধর্মগুলো (রূপের) উপকারক অরূপধর্ম পশ্চাজাত-প্রত্যয়।


👉 ১২. আসেবন-প্রত্যয় : কি অর্থে 'আসেবন'? পুনঃপুন সেবন করে বা খায়, বা পরিচর্যা ও অভ্যাস করে অর্থাৎ পুনরাবৃত্তি অথবা বারবার ঘটায়- এই অর্থে আসেবন। অধ্যয়নের ক্ষেত্রে যেমন বারবার পড়লে পরবর্তী সময়ে পড়া সহজতর হতে থাকে, ঠিক তদ্রূপ এক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী কর্ম-সচেতনতা বারবার ঘটতে থাকলে তা পরবর্তী আসেবন প্রক্রিয়ায় ঘটতে থাকে- যা পূর্ব থেকে পরের কর্ম-সচেতনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কুশলকর্ম বারবার করতে থাকলে কুশলকর্ম প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, অপর পক্ষে অকুশলকর্ম বারবার করতে থাকলে অকুশলকর্ম প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেরূপ চিত্তের প্রগুণতা বা ক্রমবর্ধনশীল দক্ষতা সম্পাদনই আসেবনের বিশেষত্ব। চিত্ত-বীথির জবন স্থানে প্রথম জবন দ্বিতীয় জবনকে স্বীয় শক্তি প্রদান করে। এরূপে দ্বিতীয় জবন তৃতীয় জবনকে, প্রথম জবন হতে প্রাপ্ত শক্তি ও নিজ শক্তি একযোগে প্রদান করে- এই প্রকারে চিত্তে শক্তি সঞ্চারক-ই 'আসেবন-প্রত্যয়'।

প্রথম জবন 'আসেবন-প্রত্যয়', দ্বিতীয় জবন তার 'প্রত্যয়োৎপন্ন'-ধর্ম, পুনঃ দ্বিতীয় জবন 'আসেবন-প্রত্যয়', তৃতীয় জবন 'আসেবন-প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম', এরূপে পূর্ব জবন প্রত্যয়ধর্ম এবং তার পরের জবন 'প্রত্যয়োৎপন্ন' আসেবন-প্রত্যয় কুশলে কুশলে, অকুশলে অকুশলে, ক্রিয়া-অব্যাকৃতে ক্রিয়া-অব্যাকৃতে। শুধু কামাবচর কুশলাকুশল ক্রিয়া-চিত্তে, মহদ্গত কুশল-ক্রিয়া-চিত্তে, অনুলোম কুশল-চিত্তে এবং নির্বাণালম্বনের গোত্রভূ চিত্তেই 'আসেবন-প্রত্যয়' হয়। লোকোত্তর কুশলচিত্তে একাধিক জবন নেই, এজন্য এটা জবন-বর্জিত, লোকীয় সাতচলিশ জবন-চিত্তেই 'আসেবন-প্রত্যয়' হয়।


👉 ১৩. কর্ম-প্রত্যয় : কি অর্থে 'কর্ম' বলা হয়? ক্রিয়া বিশেষার্থেই 'কর্ম' বলা হয়। 'চেতনাহং ভিক্খবে কম্মং বদামি, একচেতনা এককম্মং।" হে ভিক্ষুগণ! আমি চেতনাকে কর্ম বলি, এক একটি চেতনা এক একটি কর্ম। অর্থাৎ চেতনাই কর্ম। চিত্ত প্রযোগ বা চেতনা দ্বারা সাহায্য করাই 'কর্ম-প্রত্যয়'। চেতনা না থাকলে কর্ম সম্পাদিত হতে পারে না, চেতনা থাকলে চিত্ত-চৈতসিকগুলোর সংযোগে কর্ম সম্পাদিত হয়। প্রত্যয়ে প্রত্যয়ধর্ম হচ্ছে- চেতনা, যা কর্মকে নিয়ন্ত্রিত করে আর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম হচ্ছে- চিত্ত-চৈতসিক কর্ম ও কর্মের দ্বারা উৎপন্ন রূপসমূহ। 'কর্ম-প্রত্যয়' দুই প্রকার। যথা : সহজাত (সমকালে বর্তমানে) কর্ম-প্রত্যয় ও নানাক্ষণিক কর্ম-প্রত্যয়। সহজাত কর্ম-প্রত্যয়ের প্রত্যয়-ধর্ম ঊননব্বই চিত্তের ঊননব্বই চেতনা এবং প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম ঊননব্বই চিত্ত, চিত্তজরূপ ও প্রতিসন্ধিতে কর্মজরূপ। নানাক্ষণিক কর্ম-প্রত্যয়ের প্রত্যয়-ধর্ম অতীত জন্ম পরম্পরা লোকীয় ঊনত্রিশ এবং লোকোত্তর চার মোট তেত্রিশ কুশলাকুশল চেতনা এবং ছয়ত্রিশ বিপাক চিত্ত ও কর্মজরূপ-এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম।

নানাক্ষণিক কর্ম-প্রত্যয়ের একবিশেষ শক্তি আছে। চেতনা থেমে গেলেও এর শক্তি চিত্ত-প্রবাহে (স্বভাব সংস্কার আকারে) প্রচ্ছন্ন থাকে। যখন যেটি সুযোগ পায়, তখন সেটি চ্যুতি-চিত্তের পর 'ব্যক্তি বিশেষরূপে' পরবর্তী ভবে জন্মগ্রহণ করে। প্রত্যেক জীব কর্মাধীন। এমনকি যে কর্মগুলো প্রবর্তনকালে ফলদানে সুযোগ না পায়, সেগুলো নির্বাণ লাভ না হওয়া অবধি চিত্ত-সন্ততিতে প্রচ্ছন্ন থাকে।


👉 ১৪. বিপাক-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'বিপাক'? এখানে পাক অর্থে পক্কতা; 'বি' উপসর্গ যোগে বিশেষ, পূর্ণতা বা পরিপূর্ণ বুঝায়। অতএব, বিপাক অর্থে পরিপূর্ণ পক্বতা বা বিশেষভাবে পক্কতা বুঝায়। অর্থাৎ তরুণ অবস্থা অতিক্রম করে পরিপক্বতা অবস্থাপ্রাপ্ত হওয়া। কুশলাকুশল সম্পাদিত কর্ম, পরিণত বা পরিপূর্ণ ফল প্রদানের অবস্থায় বিপাকাবস্থা। এক একটি কর্মের চারটি অবস্থা। যথা : চেতনাবস্থা, কর্মাবস্থা, নিমিত্তাবস্থা, বিপাকাবস্থা। চিত্তের প্রথমাবস্থায় চেতনা অবস্থা। চেতনা নিরুদ্ধ হয়ে গেলেও সেই ক্রিয়ার বিশেষ অবস্থা কিন্তু নিরুদ্ধ হয় না, তা চিত্ত-সন্ততিতে (ভবাঙ্গে) প্রবাহমান অবস্থায় থাকে-এরূপ অবস্থাই কর্মাবস্থা।

কর্ম-প্রবর্তনের সময় বিপাক দানের সুযোগ না পেলে মরণাসন্নকালে সেই কর্ম স্মৃতিপটে উপস্থিত হয়, তখন নিমিত্তাবস্থায় আর মরণাসন্নকালে কর্মনিমিত্ত বা গতিনিমিত্তের যে-কোনো একটি আলম্বন ত্যাগ না করে মৃত্যুবরণ করে, তখন উক্ত কর্ম সেই ভবে বিপাক দান করে- এর নাম বিপাকাবস্থা। ছত্রিশ বিপাক চিত্ত ও তৎসম্প্রযুক্ত আটত্রিশ চৈতসিকই বিপাক-প্রত্যয় ধর্ম আর উক্ত ছত্রিশ বিপাক চিত্ত ও আটত্রিশ চৈতসিক এবং প্রবর্তনকালে চিত্তজরূপ ও প্রতিসন্ধিতে কর্মজরূপ-ই বিপাক-প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম।


👉 ১৫. আহার-প্রত্যয় : কি অর্থে 'আহার'? শক্তি আহরণ বা সঞ্চার করে- এই অর্থে আহার। আহার চার প্রকার। যথা : কবলীকৃতাহার, স্পর্শাহার, চেতনাহার ও বিজ্ঞানাহার। কবলীকৃতাহারের প্রত্যয় ধর্ম ভক্ষণীয় আহার্যের ওজঃ এবং প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম আহারজ রূপ; অরূপাহারের প্রত্যয় ধর্ম স্পর্শ, চেতনা ও বিজ্ঞান এবং এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম চিত্ত-চৈতসিক, চিত্তজরূপ ও প্রতিসন্ধিতে কর্মজরূপ।


👉 ১৬. ইন্দ্রিয়-প্রত্যয় : ইন্দ্রিয়কে ইন্দ্রিয় বলা হয় কেন? ইন্দ্রত্ব করে- এই অর্থে ইন্দ্রিয়। কোথায় ইন্দ্রত্ব করে? নিজ নিজ প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মসমূহের মধ্যে ইন্দ্রত্ব করে। কোন কোন কৃত্যে ইন্দ্রত্ব করে? নিজ নিজ কৃত্যে ইন্দ্রত্ব করে। সাধারণত ইন্দ্রিয়-প্রত্যয় তিন প্রকার। যথা : সহজাত ইন্দ্রিয়-প্রত্যয়, পূর্বজাত ইন্দ্রিয়-প্রত্যয় ও রূপজীবিতেন্দ্রিয়-প্রত্যয়। তন্মধ্যে পনেরো প্রকার সহজাত ইন্দ্রিয়-প্রত্যয়। যথা : জীবিতেন্দ্রিয়, মনিন্দ্রিয়, সুখিন্দ্রিয়, দুঃখিন্দ্রিয়, সৌমনস্যিন্দ্রিয়, দৌর্মনস্যিন্দ্রিয়, উপেক্ষিন্দ্রিয়, শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীযেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয়, প্রজ্ঞেন্দ্রিয়, চিন্তেন্দ্রিয়, লোকোত্তর জ্ঞানেন্দ্রিয়, লোকোত্তর জ্ঞানীন্দ্রিয়। পূর্বজাত ইন্দ্রিয়-প্রত্যয় ধর্ম পাঁচ প্রকার। যথা : চক্ষু-ইন্দ্রিয়, শ্রোত্র-ইন্দ্রিয়, ঘ্রাণ-ইন্দ্রিয়, জিহ্বা-ইন্দ্রিয় ও কায়-ইন্দ্রিয়। এই পঞ্চ প্রাসাদ 'ইন্দ্রিয়-প্রত্যয়-ধর্ম' এবং চক্ষু-বিজ্ঞানাদি পঞ্চ-বিজ্ঞান 'প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম'। প্রত্যয়-ধর্ম (গুণ, শক্তি) তিনটি- উপাদান, ধারণ, পালন। অনন্তর-প্রত্যয় উৎপাদন-গুণবিশিষ্ট, পশ্চাজাত-প্রত্যয়ে ধারণ-গুণ প্রকট এবং জীবিতেন্দ্রিয় পালন-গুণ প্রধান। কিন্তু ভাবষয়ে তিনটি গুণের কোনোটি বিদ্যমান নেই। তবে, প্রত্যয়-গুণ না থাকলেও এদেরকে ইন্দ্রিয় বলা হয়; কারণ এরা স্ত্রী ও পুরুষের হাব-ভাব, আকার প্রকারাধি লক্ষণ সম্বন্ধে কায়ার উপর আধিপত্য করে। এ ভাবদ্বয় তাই ইন্দ্রিয় হলেও ইন্দ্রিয়-প্রত্যয় নয়। রূপ-জীবিতেন্দ্রিয় প্রত্যয়-ধর্ম এর প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম কমজরূপ (রূপ-জীবিতেন্দ্রিয় ব্যতীত) রূপ-জীবিতেন্দ্রিয় সহজাত রূপের স্থিতিক্ষণে ইন্দ্রিয়-প্রত্যয়।


👉 ১৭. ধ্যান-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'ধ্যান-প্রত্যয়'? চিন্তা বা ধারণা থেকে ধ্যান শব্দটি আগমন। কিরূপ চিন্তা? মনের স্থিরতা লাভের উদ্দেশ্যে গভীর চিন্তা। ধ্যে+অন-ধ্যান; সং+ধ্যে+অন=সংধ্যান অর্থ গম্ভীর। অর্থাৎ মনকে আলম্বন বা বিষয়ের উপর গম্ভীর বা গভীরভাবে চিন্তন ও দর্শন করায়- এই অর্থে ধ্যান। এরূপ ধ্যানের অঙ্গ সাত প্রকার। এ সাত প্রকার ধ্যানের অঙ্গই ধ্যান-প্রত্যয়। যথা : বিতর্ক, বিচার, প্রীতি, সৌমনস্য, দৌর্মনস্য, উপেক্ষা ও একাগ্রতা। দ্বিপঞ্চ বিজ্ঞান ব্যতীত ঊনাশি প্রকার চিত্ত ও তৎসম্প্রযুক্ত চৈতসিক এবং উক্ত সপ্ত ধ্যানাঙ্গ সহজাত রূপগুলো প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম। ধ্যান-প্রত্যয়োৎপন্ন চিত্ত কুশল, অকুশল, ক্রিয়া, বিপাক- এই চার প্রকার। উপরি-উক্ত সপ্ত ধ্যানাঙ্গের অনুবলে চিত্তকে স্থির ও একাগ্র করত ধ্যেয় বিষয়ে পরিচালিত করে ও আবদ্ধ রাখে এবং এরূপ আলম্বনাবদ্ধ চিত্তে শারীরিক, বাচনিক ও মানসিক কার্যাদি সম্পাদন করে। কুশল ধ্যানাঙ্গ উৎপাদন ব্যতীত দান, শীল, ভাবনাদি কুশলকর্ম সম্পাদন করা সম্ভব নয়, অপর পক্ষে অকুশল ধ্যানাঙ্গ উৎপাদন ব্যতীত শীল ভঙ্গাদি কর্ম সম্পাদন অসম্ভব। একাগ্রতার তারতম্যানুসারে শক্তি তারতম্য হয় মাত্র। এসব ধ্যানাঙ্গের মধ্যে 'বিতর্ক' সহজাত ধর্মকে আলম্বনে সংযোগ করে 'বিচার' সেই আলম্বনকে বারবার পরীক্ষা করত চিত্তকে উক্ত আলম্বনে দৃঢ়ভাবে সম্পর্ক করে রাখে। 'প্রীতি' সেই আলম্বনে রুচি উৎপাদন করত চিত্তকে তথায় আকৃষ্ট করে, প্রফুল্ল করে। 'বেদনা' আলম্বন রস অনুভব করিয়ে তাকে চিত্তের অপরিহার্য করে। 'একাগ্রতা' চিত্তকে আলম্বনময় করে। অবশ্য উক্ত ধ্যানাঙ্গসমূহ ধ্যান চিত্তের সাথে সরাসরি উৎপন্ন হয় এবং সরাসরি স্ব স্ব কৃত্য সম্পাদন করে।


👉 ১৮. মার্গ-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'মার্গ'? মার্গ শব্দের অর্থ সাধারণত পথ, রাস্তা, উপায় প্রভৃতি। যে উপায়ে বা যার মধ্য দিয়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে সাহায্য করে- এই অর্থে 'মার্গ'। সুগতি, দুর্গতি, নির্বাণ প্রভৃতি স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়- এই অর্থে 'মার্গ'। তবে মানুষ বা প্রাণীগণের হাঁটার রাস্তা এখানে বুঝাচ্ছে না। এখানে জীবের আচরিত বা সুন্দর জীবনাচারণের অবতারণা করা হয়েছে- এই অর্থে-ই মার্গ। এরূপ মার্গ ১২ প্রকার। যথা : সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি এবং মিথ্যাদৃষ্টি, মিথ্যা সংকল্প, মিথ্যা প্রচেষ্টা ও মিথ্যা সমাধি। এই ১২ প্রকার মার্গই 'মার্গ-প্রত্যয়'। সম্যক দৃষ্টি প্রভৃতি অষ্টমার্গ সুগতি ও নির্বাণে লাভে সাহায্য করে। এসব ৭১ সহেতুক চিত্ত, ৫২ চৈতসিক ও সহেতুক চিত্তজরূপ, প্রতিসন্ধিকালীন কর্মজরূপই প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম।


👉 ১৯. সম্প্রযুক্ত-প্রত্যয় : 'সম্প্রযুক্ত' কি? সংযুক্ত, একত্রিত, সম্পর্ক- এই অর্থে সম্প্রযুক্ত। একত্রে উৎপত্তি হয়, একত্রে নিরুদ্ধ হয়, একই বাস্তু ও একই আলম্বন গ্রহণ করে। এই চার প্রকার সংযোগ, সম্পর্ক বা একত্র অঙ্গ-সমন্বিত হয়ে যুক্তাবস্থায় বা অভিন্নাবস্থায় উপনীত করে- এই অর্থে সম্প্রযুক্ত। সম্প্রযুক্ত-প্রত্যয় চার প্রকার অরূপস্কন্ধ। যথা: বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান।


সম্প্রযুক্ত-প্রত্যয় ও বিপ্রযুক্ত-প্রত্যয় এক যুগল। অস্তি-প্রত্যয় ও নাস্তি-প্রত্যয় এক যুগল। বিগত-প্রত্যয় ও অবিগত-প্রত্যয় এক যুগল। এ যুগলত্রয় বিশেষ কোনো প্রত্যয় নয়। পূর্বোক্ত প্রত্যয়গুলোর মধ্যে প্রত্যয়-ধর্ম ও প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম সম্বন্ধ কতগুলো সম্প্রযুক্তভাবে, কতগুলো বিপ্রযুক্তভাবে, কতগুলো অস্তিভাবে, কতগুলো নাস্তিভাবে, কতগুলো বিগতভাবে, কতগুলো অবিগতভাবে সংগঠিত বা সংযুক্ত হয়। এখানে এটাই প্রদর্শন করে।


👉 ২০. বিপ্রযুক্ত-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'বিপ্রযুক্ত'? বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন অবস্থা সম্পর্ক- এই অর্থে বিপ্রযুক্ত। বিপ্রযুক্ত-প্রত্যয় চার প্রকার। যথা : সহজাত বিপ্রযুক্ত, বাস্তু-পূর্বজাত বিপ্রযুক্ত, বাস্তু-আলম্বন পূর্বজাত বিপ্রযুক্ত ও পশ্চাজাত বিপ্রযুক্ত। এ প্রত্যয়ে রূপ-অরূপের সাথে এ বাস্তু ও এক আলম্বন গ্রহণ না করেও অরূপ উৎপত্তির প্রত্যয় হয়। তদ্রূপ অরূপও রূপের উৎপত্তির প্রত্যয় হয়। রূপ-অরূপের এবম্বিধ প্রত্যয় বিপ্রযুক্ত-প্রত্যয়।


👉 ২১. অস্তি-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'অস্তি'? 'অস্তি' এটা একটি সংস্কৃত শব্দ। অস্তিত্ব বা বিদ্যমান- এই অর্থে 'অস্তি'। অস্তি-প্রত্যয় পাঁচ প্রকার। যথা সহজাত অস্তি-প্রত্যয়, বাস্তু পূর্বজাত অন্তি-প্রত্যয়, আলম্বন পূর্বজাত অস্তি-প্রত্যয়, বাস্তু আলম্বন পূর্বজাত অস্তি-প্রত্যয় ও রূপ জীবিতেন্দ্রিয় অস্তি-প্রত্যয়। অস্তি-প্রত্যয় দ্বারা এটাই বুঝায় যে, প্রত্যয়-ধর্ম সহজাত হয়ে বিদ্যমান থাকুক বা পূর্বজাত হয়ে বিদ্যমান থাকুক, তার অস্তি বা বিদ্যমানতার কারণেই প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্ম উৎপত্তি, স্থিতি ভঙ্গক্ষণে পরিপোষিত হয়। এটা উপস্তম্ভন বা পরিপোষণ গুণবিশিষ্ট, জনকগুণবিশিষ্ট নয় এবং নিশ্রয়াকার ও প্রত্যয় হয় না, অস্তিভাবেই প্রত্যয় হয়। সহজাত, পূর্বজাত, পশ্চাজাত, রূপ জীবিতেন্দ্রিয় ও কবলীকৃতাহার প্রত্যয়াদির মধ্যে যে 'অস্তি-ভাব' তাই 'অস্তি-প্রত্যয়'। অন্যান্য এবং সন্ততি- এই দুই আকারে অস্তি-প্রত্যয় হয়। মহাভূতের সাথে ভূতোৎপন্নের 'অস্তি' 'সন্ততি' ভাবে; কিন্তু মহাভূতে মহাভূতে অন্যোন্যভাবে।


👉 ২২. নাস্তি-প্রত্যয় : 'নাস্তি' অর্থ কি? অনুপস্থিতি, উধাও হওয়া বা বিলুপ্ত হওয়া- এই অর্থে 'নাস্তি'। এই প্রত্যয় সমনন্তর নিরুদ্ধ অর্থাৎ যা এইমাত্র নিরুদ্ধ হয়েছে, এরূপ অবস্থা হতে উৎপন্ন চিত্ত-চৈতসিক ধর্মগুলো নাস্তি-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। চিত্ত, চিত্তবৃত্তি ও সচেতনতা প্রভৃতি, যা বিলুপ্ত হয়ে পরবর্তী চিত্ত ও চিত্তবৃত্তি উৎপত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। একারণে বলা হয় 'নাস্তি-প্রত্যয়' অবিদ্যমান থেকেও প্রত্যয়োৎপন্ন-ধর্মের উৎপত্তির অবকাশ প্রদান করে।


👉 ২৩. বিগত-প্রত্যয় : (চ্যুত হওয়া- সূর্যের আলোর শেষে- চাঁদের আলোর সাথে তুলনীয়) প্রথম নাম ধর্মের চ্যুতিতে পরবর্তী নাম ধর্মের উৎপত্তি হওয়া সাহায্যকারী ধর্ম।


👉 ২৪. অবিগত-প্রত্যয় : কোন অর্থে 'অবিগত'? বিগত নয়, মৃত নয়, নিষ্প্রভ নয়- এই অর্থে অবিগত। অবগিত-প্রত্যয় সম্পূর্ণরূপে অস্তি-প্রত্যয়সদৃশ। চার অরূপী স্কন্ধ পরস্পর অবিগত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। চার মহাভূত পরস্পর অবিগত-প্রত্যয়ের প্রত্যয়। প্রতিসন্ধিক্ষণে নাম-রূপ পরস্পর অবিগত-প্রত্যয়ের প্রত্যয়। চিত্ত-চৈতসিক ধর্মগুলো চিত্ত-সমুৎপন্ন রূপগুলোর অবিগত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। মহাভূতগুলো উপাদা রূপগুলো অবিগত-প্রত্যয়ের দ্বারা প্রত্যয়। অস্তি ও নাস্তি শব্দদ্বয় দ্বারা ক্রমে শাশ্বতবাদ ও উচ্ছেদবাদ বুঝায়। এর প্রতিষেধনার্থে অবিগত ও বিগত শব্দদ্বয়ের ব্যবহার আবশ্যক হয়েছে।