বুদ্ধ বলেছেন~ সঙ্খার পরমা দুখা~ সংস্কারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুঃখ নাই।
আমরা সাধারণত সংস্কার বলতে কি বুঝি? ঘর তো পুরান হয়ে গেছে, সংস্কার করতে হবে। তাই না? বিল্ডিং—এর বয়স অনেক হয়ে গেছে, সংস্কার হয় নাই। তার মানে মেরামত হয়নি। ভেঙ্গে গেলে ঠিক করাকে বলে সংস্কার। বাস্তবিক ঐ অর্থটাও ভুল নয়।
আমরাও ‘সংস্কার’ এজন্য বলি, আমাদের এই রূপকায় এবং নামকায়~ এই দু’টো কায়কে সবসময় সংস্কার করতে হয়। মেরামত করতে হয়।
এই যে আপনি খাচ্ছেন ক্ষুধা রোগের জন্য, এই খাবারটাও তো মেরামত করে নেওয়ার জন্য গ্রহণ করতে হয়। যদি একদিন না খান, মেরামত না করেন, সে আপনাকে যম দেশে নিয়ে যাবে। দান—শীল—ভাবনা কেন করেন? দান কেন করেন? আমার দানের সংস্কার নাই, তাই এই দানের পুণ্য নিয়ে আমি আগামী জন্মে ধনী হতে চাই। এ’জন্মে আমি খুব গরীব, তাই দান দিয়ে যেন আমি বড়লোক হতে পারি। শীল পালন করছি যেন উচ্চকূলে যেতে পারি। এটাও তো সংস্কার। এটা আপনাকে করতে হবে, না হলে আরেক জন্মে আপনাকে গরু—ছাগল হতে হবে। সেজন্য সংস্কার করে নিতে হবে। খাওয়া থেকে শুরু করে, রোগের চিকিৎসা থেকে শুরু করে আপনার দান—শীল—ভাবনা প্রত্যেকটির সংস্কার করে নিতে হবে। কারণ আপনার রূপকায়—নামকায় সুখ চায়। কি সুখ?
প্রথমতঃ এই কায়িক সুখ চায়, লৌকিক সুখ চায়, ক্ষুধা থেকে নিবারণ চায়, রোগ থেকে মুক্ত হতে চায়, এভাবে এভাবে উচ্চতর জন্ম চায়, আরেক জন্মে স্বর্গে যেতে চায়, ব্রহ্মত্ব চায়, সবশেষে নির্বাণ চায়। এই চাওয়ার জন্য আমাদের করার শেষ নাই। এই যে আজকে আপনারা সংঘদান করেছেন, অষ্ট পরিষ্কার দান করেছেন~ এটা একটা সংস্কার করলেন আপনারা। কি সংস্কার? দান সংস্কার তৈরি করেছেন। কিসের জন্য? নির্বাণের জন্য। দান করে নির্বাণ কামনা করেছেন, তাই না? এভাবে আগেও করেছেন বহু সংস্কার, এখনো করছেন, আগামীতেও করতে হবে। যদি জিজ্ঞেস করেন~ কতদিন করতে হবে? যতদিন নির্বাণ না পাই, ততদিন সংস্কার করতে হবে। কত দুঃখজনক না? তাই সঙ্খার পরমা দুখা~ এজন্য এর চাইতে বড় দুঃখজনক কাজ আর নেই বলেছেন বুদ্ধ।
তারপরে বুদ্ধ বলেছেন~ এতং ঞত্বা য়থাভূতং, নিব্বানং পরমং সুখং~ একে যথাযথ জ্ঞান দিয়ে উপলব্ধি করে সত্ত্বগণ পরম সুখ নির্বাণকে কামনা করেন। কি উপলব্ধি করে? এসব রোগ, দুঃখকে উপলব্ধি করে এখান থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পরম সুখ নির্বাণ কামনা করেন, যেখানে আর কোন ক্ষুধা নাই, আর কোন সংস্কার নাই, দুঃখ নাই। সংস্কার মানে সৃষ্টি, সৃষ্টি মানে ধ্বংস। অসঙ্খত~ অসংস্কৃত, আসাংস্কারিক~ অসংস্কার, যেখানে আর সৃষ্টি নাই, সেহেতু আর ধ্বংসও নাই, সেটাকে বলে নির্বাণ ধাতু।
নির্বাণ ধাতু এমন~ যেটার সৃষ্টিও নাই, ধ্বংসও নাই; যেটার আদিও নাই, শেষও নাই; যেটার উদয়ও নাই, ব্যয়ও নাই, যেটার জন্মও নাই, মুত্যুও নাই~ এটাই নির্বাণ। এজন্য যারা ক্ষুধা বড় রোগ, সংস্কার সবচেয়ে বড় দুঃখ, উপলব্ধি করে, তারা নির্বাণ কামনা করে। এখন আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন~ নিজেদেরকে তো আমরা নির্বাণকামী বলি, আপনারা নির্বাণ চান? কে কে নির্বাণ চান, একটু হাত তুলেন। সবাই চায় (সাধু—সাধু—সাধু)।
নির্বাণ কামনা করাও একটা উত্তম চেতনা। অনেকে নির্বাণ চায় না, আমি সত্যি কথা বলছি। কি বলে জানেন? তাদের অজ্ঞতার কারণেই বলে~ নির্বাণ চাই না, কারণ নির্বাণে তো কিছুই নাই। আনন্দ নাই, সুখ নাই, ছেলে নাই, পরিবার নাই, ধনসম্পত্তি নাই, কিছুই নাই। কিছুুই নাই যেখানে, সেখানে কি সুখ থাকতে পারে? সেজন্য এই ছেলে—মেয়ে, পরিবার, ধন—সম্পত্তি, প্রভাব—প্রতিপত্তি নিয়েই বাঁচতে চায় জন্ম—জন্মান্তর। এরকম অনেকেই বলেন। এটা ভুল। অনেকে নির্বাণ চাই মুখে বলে, কিন্তু আমার এই সংসার, আমার এই ব্যবসা, আমার এই সন্তান—সন্ততি—মা—বাবা—ভাই—বোন ছাড়া থাকতে পারে না। যদি ছাড়তে না পারেন, নির্বাণ পাবেন কিভাবে? সাংসারিক মায়া আর নির্বাণের মধ্যে রশি টানাটানি শুরু হয়ে যায়। তাই যদি নির্বাণ চান, সাংসারিক মায়া ত্যাগ করতে হবে। সাংসারিক মায়ার মধ্যে ডুবে থেকে যদি নির্বাণ কামনা করেন, তাহলে তা মুখেই বলা হবে শুধু, অন্তর থেকে নয়।
_________________________________________
©️ দেশনা কল্পতরু — ৬ষ্ঠ খণ্ড
সদ্ধর্ম দেশক: U Pannya Jota Thera (গুরুভন্তে)
অনুলিখনে: Umayee Marma
দেশনার নাম: সতিপট্ঠান কি নির্বাণের অন্তরায়?
তারিখ: ৭ জুন, ২০১৩ সাল।
স্থান: মুসলিম ইন্সটিটিউট হল, চট্টগ্রাম
0 comments:
Post a Comment
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের সফলতার চাবিকাটি- ধন্যবাদ পাঠকদের।