Contact Form

Name

Email *

Message *

Sunday, February 19, 2023

কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ও বুদ্ধ

 কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ও বুদ্ধ

#বুদ্ধের_চাষ_প্রসঙ্গে_ব্রাম্মন_জানতে_চাই

#কসিভারদাজ_সূত্র_উরগবর্গ_সুত্তনিপাত।

💅 একসময় ভগবান মগধরাজ্যে দক্ষিণ গিরির একনালা নামে ব্রাহ্মণগ্রামে অবস্থান করছিলেন। তখন ব্রাহ্মণ কৃষক ভারদ্বাজের খেতে বীজ রোপনের সময়ে পাঁচশো লাঙল নিযুক্ত ছিল। সে সময় ভগবান চীবর পরে ভিক্ষাপাত্রটা হাতে নিয়ে দিনের প্রথমভাগে কৃষক ভারদ্বাজের কার্যক্ষেত্রে গেলেন। সে সময় ব্রাহ্মণ কৃষক ভারদ্বাজের খাদ্য পরিবেশন চলছিল। এর পর, ভগবান খাদ্য পরিবেশনের স্থানে গিয়ে একপাশে দাঁড়ালেন। কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ভগবানকে পিণ্ডের জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে তাঁকে বললেন, ‘হে শ্রমণ, আমি কর্ষণ ও বপন করি, ওইভাবে কর্ষণ ও বপন করে খাদ্য সংগ্রহ করি। শ্রমণ, আপনিও কর্ষণ আর বপন করে জীবিকানির্বাহে নিযুক্ত হোন।’

💅 ভগবান বললেন, ‘হে ব্রাহ্মণ, আমিও কর্ষণ আর বপন করে খাদ্য জোগাড় করি।’ ব্রাহ্মণ বললেন, ‘কিন্তু আমরা শ্রদ্ধেয় গৌতমের জোয়াল, লাঙল, ফাল, যষ্টি, বলদ কিছুই দেখছি না; অথচ শ্রদ্ধেয় গৌতম বললেন, ‘ব্রাহ্মণ, আমিও কর্ষণ আর বপন করে খাদ্য জোগাড় করি।’” তারপর কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ভগবানকে বললেন, ‘কৃষক বলে আপনি বলছেন, কিন্তু আমরা আপনার কৃষিকাজ দেখছি না; আমাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিন, যাতে আমরা আপনার কৃষিকাজ জানতে পারি।’


💅 উত্তরে ভগবান বললেন, ‘আমার বীজ হলো শ্রদ্ধা, সাধনা হলো বৃষ্টি, প্রজ্ঞা-  যুগ ও লাঙল, বিনয় হলো ঈষ, মন আমার জোয়াল এবং স্মৃতি হলো আমার ফাল ও যষ্টি। আমার কায় ও বাক্য শান্ত, আমি ভোজনে মাত্রাজ্ঞ,  সত্যই হলো নিড়ানি এবং কোমলতা আমার প্রমোচন। বীর্য আমার ভার বহনকারী পশু; নির্বাণে নিয়ে যাবার সময় সেটা আমাকে পেছনে ফিরে দেখে না, আর যেখানে মনস্তাপ নেই সেখানেই আমাকে পৌঁছে দেয়। এভাবে আমার কৃষিকাজ নির্বাহিত হয়, সেটা অমৃতময় ফল প্রদান করে; এই কৃষিকাজ সম্পাদন করলে সর্বপ্রকার দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া যায়।


💅 তারপর কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ খুব ভালো সোনার পাত্রে পায়েস ঢেলে ভগবানকে বললেন, পূজনীয় গৌতম, অনুগ্রহ করে পায়েস ভোজন করুন।


💅 ভগবান বললেন, গাথা পাঠ করে যা আমার লাভ হয় তা ভোজনের উপযুক্ত নয়। যথার্থ দর্শনকারীদের পক্ষে এভাবে ভোজন করা ধর্ম নয়। গাথা পাঠ করে যা পাওয়া যায়, বুদ্ধগণ তা গ্রহণ করেন না। ধর্ম যতদিন থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এটাই বুদ্ধদের বিনয়।


💅 ভারদ্বাজ বললেন, ‘তা হলে এই পায়েস কাকে দান করব? 


💅 ভগবান বললেন,  হে ব্রাহ্মণ, দেব ও মানবলোকে, মার ও ব্রহ্মলোকে, বর্তমান শ্রমণব্রাহ্মণকুলে, দেবমানবের মধ্যে একমাত্র তথাগত অথবা তাঁর শ্রাবক ছাড়া এমন কাকেও আমি দেখছি না, যে এই পায়েস ভোজন করে হজম করতে পারে। কাজেই, ব্রাহ্মণ, তৃণহীন মাটিতে ছুঁড়ে ফেলুন, কিংবা প্রাণি নেই এমন জলে ডুবিয়ে দিন।


💅 এরপর কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ প্রাণিমুক্ত জলে ওই পায়েস ডুবিয়ে দিলেন। জলে নিক্ষিপ্ত পায়েস হতে হিস্কার শব্দ উৎপন্ন হতে লাগল, বলয়াকারে ধূমশিখা বের হতে লাগল। দিনে উত্তপ্ত ফাল পানিতে নিক্ষিপ্ত হয়ে যেভাবে হিস্কার শব্দ করে, বলয়াকারে ধূমশিখা নিঃসারণ করে, সেভাবে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে সেই পায়েসও জল হতে হিস্কার শব্দ উৎপন্ন করল, বলয়াকারে ধোঁয়া নিঃসারণ করল।


💅 তারপর কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ উদ্দীপিত ও আশ্চর্যাভিভূত হয়ে ভগবানের কাছে গিয়ে তাঁর পায়ে মাথা রেখে বন্দনা করে বললেন, শ্রদ্ধেয় গৌতম, খুবই উত্তম, খুবই উত্তম! যেমন কেউ নিচের দিকে মুখ করে থাকা পাত্রটাকে ওপরের দিকে মুখ করে, পথ-হারানো ব্যক্তিকে পথ দেখায়, আঁধারে বাতি জ্বালিয়ে দেয় যাতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি দৃশ্য বস্তুগুলো দেখতে পায়, সেরূপ ভগবান অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত করেছেন। আমি ভগবান বুদ্ধের, তাঁর প্রচারিত ধর্মের ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংঘের শরণ গ্রহণ করছি। ভগবান আজ থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমাকে আপনার শরণাগত উপাসক হিসেবে গ্রহণ করুন। আমি পূজ্যপাদ গৌতমের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করার কামনা করছি।


💅 তারপর কৃষক ভারদ্বাজ ব্রাহ্মণ ভগবানের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করলেন। নব প্রব্রজিত ভারদ্বাজ নির্জনবাসী, অপ্রমত্ত, আগ্রহপূর্ণ, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে অতি শিগগির সত্য পথান্বেষী কুলপুত্রগণ যে ধন লাভের আশায় গৃহত্যাগ করে গৃহহীন প্রব্রজ্যার গ্রহণ করেন, সেই অনুত্তর ব্রহ্মচর্য নিজেই জেনে ও উপলব্ধি করে ইহজীবনেই এর পূর্ণ সফলতা সাধন করলেন।

‘জন্মের ক্ষয় হয়েছে, ব্রহ্মচর্য কৃতকার্য হয়েছে, করণীয় কর্ম শেষ হয়েছে, ইহজীবনে আর করার কর্ম কিছুই নেই। এটা জেনে ভারদ্বাজ অর্হত্ত্বের মাঝে অন্যতম হলেন। 


____[সব্বে সত্তা সুখীতা হোন্তু]____

0 comments:

Post a Comment

আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের সফলতার চাবিকাটি- ধন্যবাদ পাঠকদের।